শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
শনিবার রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেতী প্রু স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে শুক্রবার ডিসি মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওটিতে তার সঙ্গে এক নারীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা গেছে। এ ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ‘টব অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে।
প্রবাসী সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর ছবি ও টেলিগ্রামে ভিডিওটি পোস্ট করেন।
ফেসবুক ক্যাপশনে তিনি লেখেন, শরিয়তপুরের ডিসি মো. আশরাফ উদ্দিন। একজন জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি ব্যক্তি। উনি এই ছবিগুলো নিজেই খুশি মনে তুলেছেন। ভিডিও করেছেন। ছবির ওনাকে বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। এখন বিয়ে না করে হুমকি দিচ্ছেন। ওনার কোলে তোলার গল্পের খানিকটা কমেন্টের টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওতে থাকা ওই নারী টাঙ্গাইল সদরের বাসিন্দা সেলিনা ইসলাম লিজা। তিনি ঢাকা মিরপুরে স্বামী মাজহারুল ইসলাম সংগ্রামের সঙ্গে থাকতেন। অন্যদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন লিজার স্বামীর বড় বোনের জামাই।
জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের বাসাও মিরপুর এলাকায়। পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় এবং বাসায় যাতায়াতের একপর্যায়ে দুজন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এদিকে বেশ কয়েকমাস ধরে তাদের সম্পর্কে টানাপোড়ন চলে আসছিল। পরে দুই মাস ধরে জেলা প্রশাসক ও ওই নারীর মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছিলেন শরীয়তপুরের এক আইনজীবী।
ভুক্তভোগী ওই নারী ডিসির বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি দাবি করে বলেন, উনি (ডিসি) আমার নিকটাত্মীয়। সে আমাকে বিয়ের কথা বলে আমার স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স করিয়েছে। তিনি আমার সংসার, সমাজ ধ্বংস করে পথে বসিয়েছে। সে এখন আমাকে বিয়ে না করে, উল্টো মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
এদিকে এই ঘটনার পর অবশেষে মুখ খুলেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন। তার দাবি ওই নারী তাকে ব্লাকমেইল করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে আসছিল। তাকে কয়েক দফায় ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা দেয়াও হয়েছিল।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওনি সম্পর্কের সূত্র ধরে বিভিন্নসময় ব্ল্যাকমেইল করে আসছিল। ব্ল্যাকমেইলটি যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন সে মোট অঙ্কের টাকা দাবি করে। সেই টাকা মেটানোর সামর্থ্য আমার নেই, তখন সে শরীয়তপুরের এক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে কিভাবে টাকা আদায় করা যায়। একপর্যায়ে সে আমার ডিসি পোস্টিংয়ের অনেক আগের কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ডিসি পোস্টিংয়ের পর থেকে সে টাকার জন্য অনেক চাপাচাপি করতে ছিল। পরে মাসে মাসে তার একাউন্টে কিছু টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। সে একে তো আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে, অন্যদিকে এগুলো (গোপন ছবি) সব জায়গায় দিলো। আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিবো।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ওই আইনজীবী জানান, ওই নারী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানায়, যে ডিসি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্কে তৈরি করে এখন তাকে বিয়ে করছে না। পরে আমিও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। দুজনেই আমাকে আইনজীবী হিসেবে মানে। তখন আমি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দুজনকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেই। তখন ওই নারী বলেন, বিয়ে করলে ওনি (ডিসি) আমাকে মারধর করবে ও তালাক দিবে। পরে তিনি বিয়ের পরিবর্তে এককালীন পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেন। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসক না মানলে, প্রতিমাসে এক লাখ করে হাত খরচের টাকা দাবি করেন। আর টাকা না দিলে ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার কথা জানান। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসক কিছু টাকা তাকে দেন। তবে একপর্যায়ে পুরো পাঁচ কোটি দাবি করলে জেলা প্রশাসক দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ব্যক্তিগত ভিডিও ভাইরাল করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, কারো ব্যক্তিগত ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া অপরাধের শামিল। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ও পর্নোগ্রাফি আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী এটি একটি অপরাধ। যেহেতু জেলা প্রশাসক ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক দ্রুত সময়ের মধ্যেই আইনি পদক্ষেপ নিবেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক হয়ে যোগদান করেন। এর আগে তিনি ২৭ তম বিসিএস ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে পূর্বে নিউরো ডেভলপমেন্ট, প্রতিবন্ধী ট্রাষ্ট এর পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এদিকে জেলা প্রশাসক ছুটি নিয়েছেন উল্লেখ করে জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আসলাম হোসাইন বলেন, স্যার (জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন) কর্মস্থলে নেই। যতদূর জানি ওনি দরখাস্ত দিয়ে কমিশনার স্যারের কাছ থেকে ছুটি নিয়েছেন।