সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ০৫:৪০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
কৃষি মন্ত্রণালয়ে সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রকল্প হচ্ছে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষিযন্ত্রিকীকরণ প্রকল্প নির্বাচন বানচালের চেষ্টা রুখে দেওয়া হবে: জয়নুল আবদিন নুরুল হুদার সঙ্গে ‘মব’ : দলের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেবে বিএনপি স্কাউটস দুনিয়া ও নিজেকে আবিষ্কারের সুযোগ তৈরি করে : প্রধান উপদেষ্টা সেন্টমার্টিন রক্ষায় মাস্টারপ্ল্যানের চিন্তাভাবনা চলছে: পরিবেশ উপদেষ্টা শতভাগ ভোট পড়েছে এমন কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের খুঁজছে দুদক স্বৈরাচারী সরকার তরুণদের ভবিষ্যৎ ছিনিয়ে নিয়েছিল: উপদেষ্টা আসিফ স্কাউটস কাব কার্নিভালের উদ্বোধন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা আনিসুল-সালমান-শাজাহানসহ ৫ জন রিমান্ডে সাবেক সিইসির সঙ্গে মব জাস্টিসের আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতিকে শপথ কে পড়াবেন স্পিকার না প্রধান বিচারপতি: শুনানি ৭ জুলাই ইরানে মার্কিন হামলা, যা বলল উত্তর কোরিয়া ইরানে হামলা নিয়ে ট্রাম্পের ‘অনিয়মিত’ সমালোচনা ডেমোক্র্যাটদের মার্কিন নাগরিকদের জন্য বিশ্বব্যাপী সতর্কতা জারি করল যুক্তরাষ্ট্র ইরানে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী

[t4b-ticker]

একটি অভূতপূর্ব গণ- আন্দোলন ও কিছু কথা 

Reporter Name / ২৬ Time View
Update : সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ০৫:৪০ অপরাহ্ন

নজরুল ইশতিয়াক।

রাজনৈতিক দলের শক্তির উৎস জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন, ভালোবাসা। যা আরোপিত কিংবা ম্যানুপুলেটেড নয়। বরং সময়ের সাথে সাথে গভীর আস্থা-দৃষ্টান্ত থেকে গড়ে উঠে। এটি পরীক্ষিত এবং প্রমানিত । কথার কথা কিংবা মুখের কথা নয়। জনগণের সাথে প্রতারণা মূলক সম্পর্ক তৈরী করে কেবলমাত্র ক্ষমতায় থাকার চিন্তার পরিনতি হয় ভয়াবহ। আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ হতে হয়। আপাত দৃষ্টিতে আজকে অপ্রতিরোধ্য মনে হলেও কাল সে সিটকে পড়ে। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য নিজ দলীয় সাংগঠনিক কিংবা কাঠামোগত সক্ষমতাই সব নয়। জনগণের স্বতস্ফুর্ত একটা অংশগ্রহণ, সহজাত যোগাযোগ থাকতে হয় একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে। থাকতে হয় দার্শনিক, সামাজিক ভিত্তি। আমাদের দেশে ছোট বড় বহু রাজনৈতিক দল আছে। সেসব দলের নুন্যতম সাংগঠনিক কাঠামোগত সক্ষমতাও রয়েছে। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম, নির্বাচনে সেটার প্রতিফলন দেখা যায়। এবং ঐতিহাসিক ভাবে বহু অর্জন তাদের ঝুলিতে। কিন্তু বিগত তিন দশকেও রাজনৈতিক সংস্কৃতির যৌক্তিক বিকাশ সাধিত না হওয়ায় দৃশ্যত দেশে কোন কাঙ্ক্ষিত রাজনীতি নেই। রাজনীতির নামে জনবিচ্ছিন্নতাই প্রকট হয়েছে। জবাবদিহি, দায়বদ্ধতা না থাকায় জনগণের সাথে প্রতারণা মূলক অবস্থান দেখা গেছে। শত শত দেয়াল তৈরী হয়েছে। দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আর এই সুযোগ লুটপাট, দুর্নীতি দখলদারিত্ব,পাচার বেড়েছে হাজার হাজার গুণ। বিগত সরকারকে ঘিরে গড়ে উঠা দুর্বৃত্ত বলয় ছিল রাজনৈতিক শক্তির উপর জেঁকে বসা মরণ ফাঁদ। সব প্রতিষ্ঠানগুলোই কার্যত অকার্যকর হয়ে গিয়েছিল। সঠিক রাজনীতি না থাকলে জনগণের পালস বুঝা যায় না। সেটা প্রমান হলো সাম্প্রতিক গণ আন্দোলনে। বালির বাঁধের মত ধ্বসে পড়লো শেখ হাসিনা সরকার। সব যেন এলোমেলো হয়ে গেল মুহূর্তেই। শেখ হাসিনা সরকার কোটা সংস্কার আন্দোলনের গতি যেমন ধরতে পারেনি, তেমনি মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ পথে সেটা দমনের পদক্ষেপ নিতে গেছে। যা ছিল মস্ত ভুল। দেশে সীমাহীন বেকারত্ব, তরুণ প্রজন্মের চিন্তা রুচি সম্ভাবনা, কোন কিছুকেই নুন্যতম উপলব্ধি করতে পারেনি। তাদের সব কর্মকাণ্ড ছিল গৎবাঁধা, সেকেলে,পাশবিক। রাজনৈতিক দল হিসাবেও ছিল না কোন বিশেষত্ব কিংবা সময়োচিত পদক্ষেপ। সীমাহীন স্থবিরতা, জীর্ণতা দেখা গেছে। সরকারের মন্ত্রী পরিষদ ছিল বড্ড বাজে গার্বেজ। দূরদর্শিতা ছিল শুন্যের কোঠায়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও খেয়াল খুশিতে চলতো। এমনকি নির্ভেজাল কোন সত্য শুনতেও চাই তো। সবজান্তা এক ভ্রান্ত অবস্থানে চলে গিয়েছিলেন। পরিবারতন্ত্র ছিল ওপেন, উন্মুক্ত। সীমাহীন অন্ধকারে ঢাকা পড়েছিল গণভবন- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়- সচিবালয়, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পার্টি অফিস। সব জায়গায় তলপিবাহক, অন্ধ লোকজনের অভয়ারণ্য। ফলে অন্ধত্বের অহংকার, উদ্ধত চূর্ণ- বিচূর্ণ হয়ে গেল মাত্র ৪৫ মিনিটে। যদিও সরকার উৎখাত পরিকল্পনাটি ছিল অনেক আগে থেকেই। বিগত সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু রাজনীতির উন্নয়ন না হওয়ায় সব ধরনের লুটেরা দস্যু, তস্করের ঘেরাটোপে আবদ্ধ হয়ে ছিল সরকার ও রাজনীতি। এতটাই প্রকট অন্ধকার, যেন নিজেরাই আত্মহননের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল কোন একটা আঘাতের। বাংলাদেশ একটি কালচারাল পলিটিকাল নেশন। বিপুল সংখ্যক মানুষের দেশ। এখানে মানুষের মর্যাদাবোধ থেকে গড়ে উঠবে পারস্পরিক বুনন,ভালোবাসা। অনেকটা পায়ে পা দিয়ে,গায়ে গা দিয়ে বসবাস করতে হয় আমাদেরকে। ফলে বন্ধন,মৈত্রীই তো এদেশের শক্তি। কিন্তু দেশ উন্নয়নের নামে সমাজকেই উপেক্ষা করা হয়েছে। কথায় কথায় ট্যাগ দেয়া হয়েছে। দমন নির্যাতন করা হয়েছে। শত শত ভুল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মানুষের জমাকৃত ক্ষোভকে উসকে দেয়া হয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। তথাকথিত উন্নয়নের রাজনীতি না করে দরকার ছিল রাজনীতির উন্নয়ন। কিংবা দুটোই সম্ভব ছিল সমান তালে। এতে মানুষ মর্যাদা পেত, পারস্পরিক সহনশীলতা, বোঝাপড়া থাকতো। জনরায়ের প্রতিফলন ঘটতো ভোটে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। কিন্তু সরকারকে বিপথে পরিচালনা করতে শক্তিশালী একটি লুটেরা গোষ্ঠী কাজ করেছে। তথাকথিত উন্নয়নের ছবক এদের দেয়া। রাজনীতির উন্নয়ন হয়নি বলে আমরা তরুণ প্রজন্মকে চিনতে পারিনি। একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে ভাষা ও ভাবে। এটা আমাদের সীমাহীন ব্যর্থতা। বরং তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছি। এমনকি স্বাধীনতার সৌন্দর্য বোধ প্রতিষ্ঠায় কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতেও পারিনি। সঠিক ইতিহাসও জানাতে পারিনি। ওরা তো জানেনা দেশ বিরোধী েশক্তি কারা। তারা এখন কোথায়? ফলে নায্য আন্দোলনের ফসল তো অন্যেরা তুলে নিতে জোরদার চেষ্টাও করবে। এসব সত্য জানতে দরকার ছিল রাজনীতির উন্নয়ন। আর এ জন্য দরকার ছিল একটি সাংস্কৃতিক জাগরণ। যা নিজেকে চেনাতো, বর্ণচোরা শত্রুদেরও চেনা যেত। সরকারী দলের অন্ধ নেতারাও নিজের আয়নায় দেখতে পেত নিজেদেরকে। আত্ম কর্ম বিশ্লেষণ করার একটা চেষ্টা থাকতো। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে অবজ্ঞা করতো না । সেটা না করে ভুল পথে চলতে চলতে পথ হারালো ঐতিহ্যবাহী দলটি। একদিকে নেতাদের উদ্ধত-অহংকার- লুটপাট অন্যদিকে মানুষের চিঁড়েচ্যাপটা অবস্থা। অন্ধত্ব কোথায় নিয়ে যায় সেটাই এখন আমরা দেখেছি। মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। এমন একটা অভূতপূর্ব গণজোয়ার পুরো রাষ্ট্র এবং রাজনীতিকে ধাক্কা মেরেছে। ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হতে হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারকে। উদ্ভুত গণজোয়ার ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোকে। এটা স্পষ্ট যে, স্থবির রাজনীতি আর চলবে না। একটা পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে গেছে। মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বিকল্প কিছু নেই। বৈষম্য অনৈক্য, বিভেদ সৃষ্টির কোন রাজনীতি হালে পানি পাবে না। মুক্তিযুদ্ধ কিংবা ধর্ম কার্ডও আর টিকবে না। এমনকি মিথ্যা প্রলোভনের রাজনীতিও মার খাবে। রাজনীতিক সহ সব পেশার মানুষের মধ্যে সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে।

নজরুল ইশতিয়াক

প্রধান সম্পাদক

সাপ্তাহিক কাগজ কলম


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

More News Of This Category
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30