মোঃ মন্জুর উল আলম
প্রকল্প পরিচালক
সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প
আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে পরিবর্তন ঘটছে কৃষিতে। উন্নত বিশ্বের হাওয়া লেগেছে বাংলাদেশেও। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে কৃষি ব্যবস্থা। বীজতলা থেকে উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে রয়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার।
যে লাঙল-জোয়াল আর হালের বলদ ছিল কৃষকের চাষাবাদের প্রধান উপকরণ সে জায়গা এখন দখল করে নিয়েছে আধুনিক লাঙল ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, কম্বাইন্ড হার্ভেপার, ব্রডকাস্ট সিডার পাওয়ার রিপার মেশিন। এমনকি ফসল ফলানোর জন্য জমি চাষ, বীজ বপন, নিড়ানি, সার দেয়া, কাটা, মাড়াই, ফসল ঝাড়া ও প্যাকেটিং পর্যন্ত সব কিছুই করা হচ্ছে প্রযুক্তির ছোঁয়ায়। ফলে কৃষিতে উৎপাদন বাড়ছে, কমছে উৎপাদন ব্যয়। প্রযুক্তির ব্যবহারে ফসলের অপচয়ও কম হচ্ছে। ফলে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের।
বর্তমানে এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে আছেন মোঃ মন্জুর উল আলম।
প্রকল্প পরিচালক মোঃ মন্জুর উল আলম এ প্রসংগে বলেন, কৃষিতে যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি, ফসল সংগ্রহত্তোর অপচয় হ্রাস, শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য পেতে শুরু করেছে কৃষক। জলবায়ু পরিবর্তন তথা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের কোন বিকল্প নেই।
মন্জুর উল আলম আরো বলেন, মৌসুমের সময় কৃষি শ্রমিক পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ও কম্বাইন হারভেস্টারসহ সব ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোর বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে ইতিমধ্যে টেকসই কৃষি ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। কৃষকের খরচ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে ১২ ক্যাটাগরির কৃষি যন্ত্রপাতি। হাওর ও উপকূলীয় অঞ্চলে ৭০ শতাংশ ও সমতলে ৫০ শতাংশ ভর্তুকের মাধ্যমে বিতরণ করছেন এ সকল যন্ত্রপাতি। ১২ ক্যাটাগরির মধ্যে কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার ও রিপার বাইন্ডার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার,মিডার,বেড প্লান্টার,পাওয়ার থ্রেসার,মেইজ শেলার, পাওয়ার স্প্রেয়ার,পাওয়ার উইন্ডার,ড্রযার,পটেটো ডিগার ও পটেটো চিপস যন্ত্র।
ফসল কাটা ও ফসল বপনসহ সিজনের সময় শ্রমের যে মজুরি কৃষককে গুণতে হয় তাতে যন্ত্র ছাড়া কোনো উপায় নেই। কৃষিযন্ত্র ব্যবহারে যেমন অর্থ সাশ্রয় হয়, তেমনি সময় ও শ্রম সাশ্রয় হয়। কৃষিকাজে সবচেয়ে শ্রম ও সময়নির্ভর কাজ হচ্ছে চারা রোপণ বীজ বপন ও ফসল কর্তন।
তিনি বলেন, কৃষি ষান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে দানা শস্যের উৎপাদন আরও বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। উন্নত কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রযুক্তি প্রয়োগে শস্য উৎপাদনের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রাপ্ত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও ফসল কর্তনোত্তর ক্ষতি কমানোর মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। যান্ত্রিকীকরণের বহুবিধ সুবিধাদির ফলে কৃষক দিন দিন কৃষিযন্ত্রের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে।
কোনো একটি দেশের টেকসই যান্ত্রিকীকরণ ও কৃষি প্রকৌশলী একসূত্রে আবদ্ধ। ভর্তুকিতে কৃষক পর্যায়ে উন্নত প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি কৃষকের মধ্যে দেওয়ার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণকে সাময়িকভাবে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হলেও টেকসই রূপদানে কৃষি প্রকৌশলীদের কাজে লাগাতে হবে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। কৃষি প্রকৌশলীদের কাজে লাগিয়েই তৈরি করা যাবে দক্ষ যন্ত্রচালক। একজন কৃষি প্রকৌশলী গবেষণা প্রতিষ্ঠানে উদ্ভাবন ও উন্নয়নকৃত প্রযুক্তি এলাকাভেদে মূল্যায়ন, উন্নয়নে কার্যকরী সুপারিশ প্রদান, কৃষক পর্যায়ে পরিচিতিকরণ, কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণে গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং মাঠপর্যায়ে যোগসূত্র স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।
মন্জুর উল আলম বলেন, দেশের প্রায় এক পঞ্চমাংশ খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে হাওরভুক্ত ৭টি জেলায়। আর এই ৭ জেলার হাওড়ের প্রায় ৮০℅ বোরো ধান কর্তন হয় কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রের মাধ্যমে। অল্প খরচে ধান কাটা,সংগ্রহ করার ফলে প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
মন্জুর উল আলম বলেন, দেশের কৃষি ব্যবস্থায় যান্ত্রিকীকরণ প্রক্রিয়া অর্থনীতিতে বড় সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। কৃষিতে যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি, ফসল সংগ্রহত্তোর অপচয় হ্রাস, শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য পেতে শুরু করেছে কৃষক। জলবায়ু পরিবর্তন তথা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের কোন বিকল্প নেই।