কৃষকের সকালঃ
ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। শিশিরভেজা ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে মাঠে নামেন খোকনের বাবা। তার কাঁধে এক গামছা, পেছনে ছেঁড়া লুঙ্গি, পা দু’টো খালি। কিন্তু চোখে-মুখে রয়েছে একরাশ বিশ্বাস—এই
ফসল যদি ভালো হয়, খোকনের স্কুলের বেতনটা হয়তো সময়মতো দেওয়া যাবে। তিনি একজন কৃষক। তার জমি আছে এক বিঘা, বছরের অর্ধেক সময় তাতে কোনো ফসল ফলানো যায় না। বাকিটা সময় তিনি প্রকৃতি, বাজার আর ভাগ্যের সাথে লড়েন। একদিকে সারের দাম, অন্যদিকে পণ্যের দরপতন, মাঝখানে বন্যা-খরা। কিন্তু তবুও তিনি স্বপ্ন দেখেন। এই মানুষগুলো—যাদের কেবল ভোটের
সময় মনে রাখা হয়—তারাই প্রতিদিন আমাদের প্লেটে ভাত তুলে দেয়।
একদিন খোকনের ছেলে জিজ্ঞেস করেছিল, ্য়ঁড়ঃ;বাবা, আমি কি কৃষক হতে পারি?্য়ঁড়ঃ; খোকনের বাবা হেসে বলেছিলেন, ্য়ঁড়ঃ;চাস, তবে আগে মানুষ হ…্য়ঁড়ঃ; এই ্#৩৯;মানুষ হওয়্#া৩৯;র তর্জমা হয়তো সময়ই করবে, কিন্তু আমরা যারা শহরে বসে প্যাকেটজাত চাল কিনি, আমাদের উচিত একবার হলেও খোঁজ নেওয়া—যে মাটি থেকে আমাদের খাবার আসে, সেই মাটির মানুষেরা কেমন আছে?
কৃষকের ইতিহাস ও স্বপ্নভঙ্গঃ
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে কৃষক ছিল জাতীয় অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। যুদ্ধের বিভীষিকা কাটিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের যে স্বপ্ন জাতি দেখেছিল, তা বাস্তবায়নের কৃতিত্ব প্রধানত
কৃষকের। অথচ তখন তাদের নিজস্ব জীবনে ছিল দারিদ্র্য, অস্থিরতা ও অবহেলার ইতিহাস।
সত্তরের দশকে দেশে ভূমি সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হলেও বাস্তবায়নের অভাব এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা কৃষকদের জন্য স্থায়ী নিরাপত্তা দিতে পারেনি। আশির দশকে গ্রিন রেভল্যুশনের ছোঁয়ায় কৃষি উৎপাদন বাড়লেও তার সুফল সীমিত পরিসরে পৌঁছায়। উচ্চফলনশীল বীজ, সেচযন্ত্র ও সার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন শুরু হলেও ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা প্রায়শই সেই প্রযুক্তি ও প্রণোদনার বাইরে থেকে যায়।
নব্বইয়ের দশকে কৃষি বেসরকারিকরণ, ভর্তুকি কমানো ও বাজারমুখী উৎপাদন নীতির ফলে কৃষকের বাজার নির্ভরতা বাড়ে, কিন্তু সেই বাজার কখনও তাদের জন্য সহানুভূতিশীল হয়নি। পণ্যের দাম কমে
গেলে দায় কৃষকের, দাম বাড়লে মুনাফা পায় মধ্যস্বত্বভোগী। এই অসম চক্রেই কৃষক বাঁচে, এবং ধীরে ধীরে ঋণের বেড়াজালে আটকে যায়।
কৃষি ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদনের বর্তমান চিত্রঃ
বাংলাদেশের কৃষি মানেই একটি নিরন্তর সংগ্রামের গল্প। এটি শুধুমাত্র অর্থনীতির একটি খাত নয়, বরং এটি একটি জীবনচক্র—যেখানে একজন কৃষক প্রতি মৌসুমে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেন তার পরিবারের বেঁচে থাকার জন্য। বাস্তব চিত্রটি এতটাই জটিল যে অনেক সময় নীতিনির্ধারকেরা এর গভীরতা উপলব্ধি করতে পারেন না। চলতি বছরে সুনামগঞ্জের এক কৃষক পরিবারের অভিজ্ঞতা বলছে, তিন মাস টানা খরায় বোরো চাষে ক্ষতি হয়। কোনো সরকারি সহায়তা ছাড়াই তারা পরিবারের সদস্যদের শ্রম বিক্রি করে ধান কাটার যন্ত্র ভাড়া করে জমির ফসল রক্ষা করেন। একইভাবে কুড়িগ্রামে পদ্মার ভাঙনে কৃষিজমি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পর একজন কৃষক পুরো পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় ঠাঁই নেন, কিন্তু সেখানে কোনো বিকল্প কর্মসংস্থান পান না।
অনেক গ্রামীণ কৃষক দিনে তিন বেলা খেতে পারেন না, অথচ তার উৎপাদিত চাল, সবজি বা ফল চলে যায় শহরের সুপারশপে। গ্রামের হাটে কৃষকের পণ্য বিক্রি হয় দালাল বা ফড়ের কাছে, এবং ওই দালালই
পরের দিন শহরে তিন গুণ দামে তা বিক্রি করে। কৃষকের হাতে থাকে মাত্র এক-পঞ্চমাংশ মূল্য। একই জমিতে বারবার চাষ করতে গিয়ে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে, কিন্তু অধিকাংশ কৃষক জানেন না কীভাবে জৈব সার ব্যবহার করতে হয়। আবার অনেক কৃষকের কাছে প্রযুক্তি পৌঁছায় না। তারা এখনও নিজস্ব অভিজ্ঞতা বা অন্যের মুখে শোনা তথ্যের ভিত্তিতে চাষাবাদ চালিয়ে যান। ফলে উৎপাদন কমে যাচ্ছে, বাড়ছে লোকসান।
এসব বাস্তব চিত্রই আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—কৃষকের জীবন এক রকম বেঁচে থাকার যুদ্ধ, যা তারা লড়েন নিঃশব্দে। বাংলাদেশে কৃষি এখনও মৌসুমি ও জলবায়ুনির্ভর। আউশ, আমন ও বোরো—এই তিন ধান মৌসুমে প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে ধান চাষ হয়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্ষার ধরন ও শীতের তীব্রতায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এতে ফলনের নিশ্চয়তা কমেছে এবং কৃষক আরও অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ধেশের দক্ষিণ অঞ্চলে লবণাক্ততার কারনে কৃষির বাস্তব অবস্থা বয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
২০১৪ সালের কৃষিশুমারি অনুযায়ী, গড় জমির আয়তন ০.৩৯ হেক্টর, যেখানে ১৯৮৮ সালে তা ছিল ০.৬১ হেক্টর। এই হ্রাসে দেখা যায়, কৃষিজমি উত্তরাধিকারসূত্রে ভাগ হয়ে ছোট হয়েছে। ফলে যান্ত্রিকীকরণে প্রতিবন্ধকতা, এবং লাভজনক উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। ধান ছাড়াও গম, ডাল, পাট, শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন বাড়ছে। তবে কৃষকের আয় বাড়েনি। চাষের খরচ বেড়েছে বহুগুণ, কিন্তু বাজারে তারা যে দাম পায়, তা ন্যায্য নয়। পেঁয়াজ, রসুন, ডিম, মাছ মাংস বা চাল—সব কিছুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এমন এক চক্র, যাদের কাছে কৃষক শুধু একঘণ্টার দরদাম।
কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতি ও গ্রামীণ জীবনঃ
বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর সমাজে একসময় কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতি ছিল গ্রামীণ জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। কৃষক শুধু চাষ করতেন না, তারা ছিলেন এক সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। বীজ বপন, চারা রোপণ, ধান কাটা কিংবা নতুন ধান ঘরে তোলাকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল এক প্রাচীন রীতি, উৎসব আর সামাজিক ঐক্য।
আষাঢ়-শ্রাবণের ভোরে মাঠে নামার আগে গাওয়া হতো রোপার গান—“আষাঢ় মাসে বাদল দিনে রোপন করি ধানৃ”। পল্লীগানের মাধ্যমে কৃষকেরা তাদের আশা-নিরাশা, প্রেম-বিরহ, দুঃখ-বেদনা প্রকাশ করতেন। নবান্ন ছিল শুধু খাদ্যের উৎসব নয়, এটি ছিল শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে একত্রিত হওয়ার উপলক্ষ।
গ্রামের হাট ছিল কেবল বাণিজ্যের নয়, সামাজিক মিলনের ক্ষেত্র। কৃষক সেখানে শুধু পণ্য বিক্রি করতেন না, খোঁজখবর নিতেন আত্মীয়-প্রতিবেশীর, গড়ে উঠতো বিশ্বাস ও সহযোগিতার সম্পর্ক। গ্রামের বয়স্ক মানুষদের গল্পে ফুটে উঠত কৃষিনির্ভর আধ্যাত্মিকতা, প্রকৃতি-ভিত্তিক দর্শন।
কৃষিকাজে পারস্পরিক সহযোগিতা ছিল নিয়মিত রীতি—্#৩৯;আধ্#া৩৯; বা ্#৩৯;বায়ন্#া৩৯;, ব্যাগার পদ্ধতিতে দলবদ্ধভাবে জমি চাষ, ধান কাটা বা গৃহনির্মাণ হতো। এসব কার্যক্রমে নারী-পুরুষ সকলেই অংশ নিতেন। গান গাইতেন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতেন—এ ছিল এক সামাজিক শিল্প। কিন্তু কালের চক্রে এই সংস্কৃতি আজ বিলুপ্তপ্রায়। আধুনিকতার ছোঁয়ায়, প্রযুক্তির একক ব্যবহারে, নগরায়ণের চাপে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্যে কৃষক সমাজ এখন বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ জীবনধারা হারিয়ে যাচ্ছে, যা কেবল ঐতিহাসিক নয়—একটি জাতিগত আত্মার ক্ষয়।
আমাদের উচিত এই কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করা, তা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া। কারণ, কৃষি কেবল উৎপাদন নয়—এটি আমাদের সত্তা, আমাদের অতীত, আমাদের ঐতিহ্য।
কৃষকের শ্রম, সংকট ও শ্রেণিবিন্যাসঃ
বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষকই প্রান্তিক বা ক্ষুদ্র। ভূমিহীন কৃষকের হার ১৫-২০ শতাংশ, যারা মূলত অন্যের জমিতে হারি দিয়ে চাষ করে। ক্ষুদ্র কৃষকেরা প্রায়শই মৌসুমি অভাবে পড়ে, এবং চাষের মৌসুমে উচ্চ সুদের ঋণ নিয়ে বিপদে পড়ে। ব্যাংকের শর্ত তারা পূরণ করতে পারে না, এনজিওর কিস্তি আবার ফসল ওঠার আগেই দিতে হয়।
আরও বড় সংকট হলো—জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শস্যের সময়সূচি বদলে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, অতিবৃষ্টি বা খরা—এসব প্রায় নিয়মিত ঘটনাই কৃষকের মাথায় বজ্রপাত হয়ে নামে। চাষের আগে বীজ কেনা, চাষের পরে ফসলের পরিচর্যা করা মাঠ পাহারা দেওয়া, বিক্রির সময় বাজারে ঠকে যাওয়া—এই তিন ধাপেই কৃষক প্রতারিত হয়।
প্রশিক্ষণ, উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের চিত্রঃ
সরকার ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা কৃষকের প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারে ভূমিকা রাখছে। বিএআরডি কমিলার মডেল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মসূচি, কৃষক মাঠ স্কুল—সব মিলিয়ে একটা কাঠামো দাঁড়িয়েছে। তবে এর ফল এখনো সীমিত ও দুর্নিতি গ্রস্থ। যান্ত্রিকীকরণ বাড়লেও তা এখনও শহরকেন্দ্রিক। পাওয়ার টিলার, রিপার, হারভেস্টার—এসব যন্ত্র কিনতে অধিকাংশ কৃষকের সামর্থ্য নেই। সরকার ভর্তুকি দিলেও সেই সুযোগ অনেকেই পায় না।
মোবাইল অ্যাপে আবহাওয়ার পূর্বাভাস, বা ডিজিটাল কৃষি সেবা—এসব তথ্য গ্রামীণ কৃষকের কাছে পৌঁছায় না অন্তঃস্থ যোগাযোগহীনতায়। নারী কৃষকের অবদান এখনো স্বীকৃত নয়। তারা শুধু চাষে নয়, সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বাজারজাতকরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অথচ জমির মালিকানা, কৃষিঋণ বা প্রযুক্তি প্রশিক্ষণে তারা পিছিয়ে।
রাষ্ট্রীয় নীতি ও রাজনৈতিক বাস্তবতাঃ
বাংলাদেশে ১৯৯৯ সালে প্রথম জাতীয় কৃষিনীতি প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তী সংস্করণ আসে ২০১৩ ও ২০১৮ সালে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষকের অধিকার, প্রযুক্তি ব্যবহার, ফসলবৈচিত্র্য প্রভৃতি বিষয় উল্লেখ থাকলেও বাস্তবায়নে রয়েছে ঘাটতি।
সার ও বীজ ভর্তুকির ক্ষেত্রে প্রান্তিক কৃষক উপকৃত হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে অনেকেই সুবিধা পায় না। কৃষি বীমা পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলেও তা জনপ্রিয় হয়নি। স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতির কারণে প্রকৃত কৃষক নয়, বরং প্রভাবশালী মহলেই বরাদ্দ কেন্দ্রীভূত হয়।
আন্তর্জাতিক তুলনা: কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ?
ভারত, চীন, মালয়েশিয়া ও আমেরিকার মতো কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে কৃষককে কেন্দ্র করে নীতিনির্ধারণ হয়েছে। ভারতে চগ-কওঝঅঘ, ডিজিটাল বাজার (ব-ঘঅগ) কৃষকের আয় বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। চীনে যান্ত্রিকীকরণ শতকরা ৬০ ভাগের বেশি। আমেরিকায় কৃষি পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর—উৎপাদন কমলেও কৃষকের আয় বেশি।
বাংলাদেশে কৃষির এউচ-তে অবদান ১৩% হলেও কৃষকের আয় ও সামাজিক মর্যাদা সে অনুপাতে বাড়েনি। পাট বা চাল রপ্তানি বৃদ্ধি পেলেও লাভবান হয়েছে মধ্যস্বত্বভোগী, কৃষক নয়। আমরা কৃষিকে শুধু খাদ্যের উৎস হিসেবে দেখি, কিন্তু কৃষিকে যদি আমরা কৃষকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, তবে বুঝবো—এটা শুধুই উৎপাদন নয়, এটা একটা জীবনব্যবস্থা।
কৃষকের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎঃ
বাংলাদেশের কৃষি বদলাচ্ছে। প্রযুক্তি আসছে, প্রশিক্ষণ বাড়ছে, বাজার খুলছে। কিন্তু এই পরিবর্তনের মূল ভিত্তি—কৃষক—যদি নিঃস্ব থাকে, তবে সে পরিবর্তন টেকসই নয়।
কৃষক আর কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আমাদের যা করা প্রয়োজন:
কৃষিকে শুধু উৎপাদনের খাত নয়, সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন পেশা হিসেবে ঘোষনা করা।
ন্যায্য বাজারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
কৃষিঋণ সহজীকরণ ও সুদের হার কমানো।
ডিজিটাল তথ্যসেবা ও প্রযুক্তির প্রবাহ প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছানোর ব্যাবস্থা করা।
খোকনের বাবা যদি এবার ফসল ভালো পান, তবে খোকনের স্কুলের ফি জমা পড়বে। আর একদিন খোকন হয়তো বলবে—“আমি কৃষক হবো, কারণ কৃষক মানে গর্ব, কৃষক মানে দেশ।” ১৯৭১ সালে মহান
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী বীরদের মধ্যে ৯৫% ছিলো কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ।
আজকের খোকনের বাবারা কেবল একজন উৎপাদক নন, তারা জাতির রক্ত, মাটি ও মানচিত্রের মূল ভিত্তি। তাদের প্রতি অবহেলা মানেই আমাদের নিজের অস্তিত্বকে অবজ্ঞা করা। কৃষকের মর্যাদা বাড়াতে হলে দরকার সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। কৃষককে কেবল সহানুভূতির বস্তু নয়, উন্নত রাষ্ট্রের স্থপতি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
সরকারের যেমন নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি নাগরিক সমাজেরও আছে সম্মান দেখানোর, সচেতনতার, এবং সংহতির কর্তব্য। পত্রিকায়, পাঠ্যবইয়ে, আলোচনায়, উৎসবে—সবখানে কৃষকের কথা উচ্চারিত না হলে আমাদের শহরও আসলে অনাহারের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকে।
আমরা যদি চাই নিষ্ঠাবান, ন্যায়বান, দায়িত্বশীল নাগরিক সমাজ গড়ে উঠুক—তাহলে আমাদের শুরু করতে হবে কৃষককে সম্মান দিয়ে। তাদের ঘামে যে অন্ন, সে-অন্নের মর্যাদা বুঝে কাজ করলেই জাতি হয়ে উঠবে সজাগ, সংবেদনশীল এবং মানবিক।