বাংলাদেশের সংগীত দৃশ্যে ২০১৩ সালে নতুন একটি নাম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে মিঙাল। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের কিছু তরুণ শিল্পী, যারা সংগীতকে বেছে নিয়েছিলেন নিজেদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির পরিচয় ধরে রাখার মাধ্যম হিসেবে। এক দশক পর মিঙাল এখন শুধুমাত্র একটি ব্যান্ড নয়, বরং এটি স্থানীয় সাংস্কৃতিক পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। ব্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে ছিলেন অনিমেষ সিংহ, অনিক কুমার সিংহ, কনিকা সিনহা, সৌরভ সিনহা, অভিষেক সিংহ এবং অনুপম সিংহ। বর্তমানে ব্যান্ডটির চার সদস্য: অনিমেষ সিংহ (ভোকাল ও গিটার), উত্তম দেব (লিড গিটার), অভিষেক সিংহ (বেজ গিটার) এবং অনুপম সিংহ ( ড্রামস)। তারা শুরু থেকেই চেয়েছিলেন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষার সংগীতকে লোকগান, রক ও ফিউশনের সমন্বয়ে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে, যাতে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ ঘটে। ব্যান্ডটির গানের তালিকায় “কুঞ্জবনে” বা “মধুরশ্রী-বৃন্দাবনে”-এর মতো লোকগান থেকে শুরু করে “ইমা” এবং “আহো আজির”-এর মতো মৌলিক সৃষ্টি পর্যন্ত শোনা যায় বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সংস্কৃতির ছোঁয়া। এই গানের ভাষা শুধুমাত্র গীত নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রদর্শন। মিঙালের সর্বশেষ প্রকাশিত গান ‘কতিও দুরেই’—তাদের সংগীতজগতের এক নতুন অধ্যায়। কথা ও সুর রচনা করেছেন শুভাশিস সিনহা, যিনি ২০২৪ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত নাট্যকার। তার লেখায় কথার দ্যোতনা ও সুরের আবেগ ভালভাবে মিশেছে, যা শ্রোতাদের একটি নতুন অনুভূতি প্রদান করে। গানটির ভিডিও শুট হয়েছে শ্রীমঙ্গল ও কামালগঞ্জের প্রাকৃতিক পরিবেশে। ভিডিওটির ডিরেক্টর অফ ফটোগ্রাফি (DOP) হিসেবে কাজ করেছেন অসমিত নন্দী মজুমদার অভি (Asmit Aovi Photography) । গানের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনিমেষ সিংহ, এবং তার সঙ্গে ছিলেন প্রিয়াঙ্কা সিনহা, চ্যানেল আইয়ের ‘পার্বত্য প্রিয়দর্শিনী ২০১৪’-এর চ্যাম্পিয়ন, যিনি ভিডিওটির ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিংয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। গানটির পোস্টার, পোশাক ও গ্রাফিক ডিজাইন করেছেন ভোকাল অনিমেষ সিংহ নিজেই, এবং সহযোগিতায় ছিলেন অরিফ রিফাত। কস্টিউম পার্টনার হিসেবে ছিলো FOOTI—একটি উদীয়মান ফ্যাশন ব্র্যান্ড, যারা মিঙালের ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতায় বৈচিত্র্য যোগ করেছে। ‘কতিও দুরেই’ গানের মাধ্যমে মিঙাল একটি নতুন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। এটি তাদের সংগীতকে দেশীয় সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যাওয়ার পথে এক সাহসী পদক্ষেপ। তবে, মিঙাল এখনও তাদের সঙ্গীত শৈলী এবং সংস্কৃতি আরও বিস্তৃত করতে কাজ করছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সম্প্রদায়ের মধ্যে। মিঙাল, সংগীতের দল হিসেবে, শুধু একটি শৈলী নয়, একটি ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব করছে।